অনিন্দ্য রায়

 

অনিন্দ্য রায়ের কবিতা

বাংলা দেহতত্ত্বের গান



তাঁবুহীন, সে রাত্রি বালিকাপ্রায়, বজ্রবিদ্যুৎসহ সম্ভাবনা আছে 
তবু জাগরণ নাই, কেবল প্রান্তর হয়ে শুয়েছিল তার পিছুটান
শীত এল মহাজন, শরীরের সর্ব ব্যধি সুদ সহ সারাতে চাইল 

কোথায় আশ্রয় নেব, ভাবি
                   আর ফোঁটা ফোঁটা ক্ষুৎতৃষ্ণা পড়ে

আমাদের তাঁবু চাই, খড়ের বিছানা চাই কলঙ্ক বাঁধিতে


সানুদেশে ওই জলাশয়, তুমি বুঝি যথেষ্ট ঘেমেছ
স্বপ্নে এসেছিল বাষ্প, গাছে গাছে রেখেছে কামড়

একটি বিপন্ন ঘোড়া জল খেতে নিচু করে মুখ
প্রবল নিশ্বাসে সেও কিছুটা শুকিয়ে দিল, কিছুটা জিহ্বায়
                               চেটে খেয়ে নিল নুন

আনন্দ পেয়ে

এত পাহাড়ের গল্পে বেশ্যালয় শুনেছি যে
প্রেমে পড়ে গেছি


গমক্ষেত,পায়রার দলে মিশে খাদক হলাম
এবং পালক তুলে মাংসের সরল আহ্বানে
                                  বাড়ালাম দাঁত

কোথাও টংকার হল, পতাকাদন্ডের জন্য বেদীটি যের’ম
বাতাস যের’ম কোনো কাপড়ের ধ্বজা তুলে ধরে

কোথাও পদার্থ থেকে বিজ্ঞান ছাড়িয়ে
               একে চন্দ্র, দু’য়ে পত্র, ঝরছে শোণিত


নিদ্রা, সে তো বাদ্য এক, বাজলে নিশ্চুপ
এক গাছি তার, ছিঁড়লে গহ্বরে পড়ি

যে রজ্জু ধরেছি ভ্রমে, সে তো এক প্রাণী
আমার নিশ্বাস খেয়ে পুষ্টি পেল খুব
আমাকে চিবায়, সুখ, আমাকে দুখায়

লাথি মেরে ভাঙি ভান্ড
না ভেঙে বাজে না

বের হয় যে মাকড়, সহস্রটি পা
গান ভেবে তাকে আমি কন্ঠে বসালাম




ছোঁওয়া  রাখি সেচ সংস্কারে
নৌকা যায় জলমাদলের
যুদ্ধ সেরে কর্মকার ফেরে
লোহা তার শরীরে চাদর

আমি শুধু মরচে বানাতাম
আবার দুহাতে ঘষে ঘষে
টানলাম ক্ষিতি-অপ-তেজ

আমি শুধু লড়াই করিনি

কেন আমি লড়াই করিনি


ছাউনি চরিত্র, খুঁটিগুলি রিপু-কাটা লগা
দেওয়াল তুলব না যদি হাওয়া থাকে আক্রমণকারী

দরজা শূন্যের মাঝে পুনর্বার গোলচিহ্ন, আঁকি
জানলা তদ্রূপ

বসত করব না যদি শয্যাতলে না থাকে খরিশ

বেতের ছোট্ট ঝাঁপি আর একটি প্রবল বাঁশরি
ছোবলে খুঁটিরা কাঁপবে
               শ্বাসের ধাক্কায় গূঢ় ছাউনি নড়ে যা্বে



গাছে যে কুঠারচিহ্ন, পাখি তাতে চঞ্চু গলাবেই
ঠুকরিয়ে ক্ষতে আরও রসের যোগান দেবে
আর্তনাদ আরও মারবে সপাং করে
                                 কাঠুরিয়া, গুরু

“সোনার ফিরিয়ে দিবি                  রূপার ফিরিয়ে দিবি
    নিজেরটি নিবি শুধু দেবীর হস্তের থেকে
এবং তাঁহাকে                       প্রবল আঘাতে
              জলে ফেলে দিবি, নতুবা
নতুবা প্রতিটি                  গাছের সঙ্গে
            তিনি তোর বিয়া রচিবেন”

প্রতিটি গাছের কোলে ঝলমল করে উঠবে
তোমার সন্তান

পাখি দুটি, ডিম পাড়ে এমাসে-ওমাসে
একটিই ঝুড়ি, তাতে সর্প রয়েছেন
  তিনি গ্রহণ করেন যা যা সকলই জন্মায়

পেটে ব্রহ্মাণ্ড আরেক
অন্য চাঁদ-গ্রহ-তারা, অন্য নেবুলায়
  ঝরছে রক্ত আর ছেঁড়া মহাকাশে টুকি দেয়  দারুণ সাপুড়ে

সে নিজেও পক্ষীকূলজাত
সে নিজেই সাপের মরদ

































5 comments:

  1. খুব ভাল । খুব ভাল লাগল। নিদ্রা সে ত বাদ্য এক বাজলে নিশ্চুপ ... আহা ।

    ReplyDelete
  2. এক ভিন্ন জগতে প্রবেশ করলাম যেন, আমাদেরই অকথিত এক আদিম সভ্যতায় ও স্বভাবে মন ভিজে গেল।

    ReplyDelete
  3. This comment has been removed by the author.

    ReplyDelete
  4. ৮ নং কবিতাটা সব থেকে ভালো লেগেছে

    ReplyDelete

Facebook Comments