জপমালা ঘোষরায়


 

 জপমালা ঘোষরায়ের কবিতা  

 

তৃষ্ণার ক্যালরি, বিতৃষ্ণার টক্সিনস


 

      এমন কি যে নবাগত তাকেও চলে যেতে হবে। তবুও চলে যাওয়াকে কেন্দ্রকরে যেসকল নক্ষত্রপতনের চর্চা শুরু হল তাতে কিছুতেই অপূর্ণের ফাঁকফোকরগুলো ঢাকা গেলনা, অথচ ইহাও পূর্ণ উহাও পূর্ণ এবং পূর্ণাৎপূর্ণমদচ্যতে। রান্নাঘরে রাতের কিছু বাসী মাংস পড়েই থাকলো, জানলাগুলো বন্ধ করলেন সতর্কে এবং উইন্ডোজও খোলা রাখলেন না, তারপর বিছানা খামচে ঘেমে নেয়ে নীচে নেমে গেলো তৃষ্ণার ক্যালরি ও বিতৃষ্ণার টক্সিনস.... কবি ছটফট করে জল চাইলেন যে মুহূর্তে সেই মুহূর্তেই ছাতি ফেটে গেল, বেলুন ফেটে গেলে যেমন সর্ষে, সর্ষপ অন্ধকার ফেটে গেলে যেমন আলোকব্রহ্ম..... 

        আস্তিনের ভিতর লুকিয়ে রাখা এবং থাকা শব্দ, মুগ্ধ, বোধ এবং ব্যাকরণ, নিজেরই ধ্রুবকে নিজেই আকুপাংচার করে নাদ থেকে বিস্তারে এই যে টায়ার পাংচার,  তার কিছুটা যদি আগেও চর্চিত  হত হয়ত বেঁচে বর্তে যেত কিছুটা ঘরকন্না।


        টেবিল চাপড়ানো উচ্ছিন্ন ছলাং মেরে কেড়ে নেওয়া মাইক্রোফোন ইত্যাদি এবং একাকী  অন্ধকারে তুরীয় রাজপথ ব্লট করেছে যেসব হাইপার, তুড়িয়াঁয় লজিক্যালি অস্বীকৃত সেইসব 'তাহাদের' কুমিরিয়ানাকে থুৎকার দিয়ে নিজেকে শূন্য করে আপোষহীন  চ্যাঁচাচ্ছে লোকটা,  কবি ও পাগল।  জীবনের যতকিছু রণভঙ্গ ধ্বজভঙ্গ, সভঙ্গ ও অভঙ্গ শ্লেষ আশ্লেষ অলংকার ও চন্দ্রিকা স্ট্র‍্যাপোস্ফিয়ারে গিয়ে ফেটে যাচ্ছিল, নিদারুণ শূন্যকালের সেইসব হিপ অফ গারবেজ পোড়ানোর অন্তিম ধোঁয়াসমূহের অ্যানাটমি সমস্ত zone ও বিজন ছাড়িয়ে এবং ছড়িয়ে গেল, ডানাভাঙা প্রজাপতির মত থুবড়ে থাকলো একটা অসহায় সেল ফোন,  যেটা বার বার বাজছে---- ভুল....বারবার বলছে--- ভুল.....ভুল মানুষেরা ভুলভাল বলছে ঠিকঠিক কথা।



২ 

        নাড়ীর তো কোন দোষ ছিল না,  নক্ষত্রেরও ছিল কি? বিষ ও বৈভব মৃতের কত পাদ দোষ ধার্য করেছিল, টুটতা হুয়া তারাদের কাছে কী কী চেয়ে নেওয়া হয়েছিল সে কি কেউ জানে?  পতিত নক্ষত্রের মতো এক কিশোরী পুনর্ণবা কখনোই তাকে না দেখেও কেঁদে কেঁদে ঘুঙরু হয়ে ব্রেইল আলফাবেটস এ নাগিন বাঁশি রেখে দিচ্ছে--- পায়েলিয়া কি জৌনপুরি যৌনপুরি ঝনকার..... ইয়ে শুনা মাহোল..... ইয়ে বিরানিয়া....

        বেঁচে থাকতে একপাত খেতেও যারা দেয় নি সেই সব "তাহাদের" গদগদ কুমিরামিও বরদাস্ত করে নিচ্ছে তাঁর দ্বিতীয়  নিউক্লিয়াস, প্রোটনকণারা ছুটছে প্রোটিনের দিকে.... পারলৌকিক  জন্মের দিকে.... পানশালার মত ও মতান্তর, নখর ও নখরামিগুলো ছলছল করছে রাজকীয়নীল হুইস্কির বোতলে। আজকাল চোখেও কম দেখছিলেন  কবি, পূর্ণকে শূন্য না দেখলেও আংশিককে মাপতে পারছিল না তাঁর  চোখ, প্যয়াসি আউর আখরি আঁখিয়া..... আঁখিয়োঁ কো রহনে দো  আঁখিয়োঁ কে আসপাশ.....কিন্তু কেন জানিনা আকাশীরং টি-শার্টটাই শুধু ফেঁসে গেল গ্যালাক্সিতে...... এখনো তাঁর হাত ভাঁজ করে সহাস্য নিরীক্ষণের বিভঙ্গ আর  একটা কভারপিক সোশ্যাল মিডিয়ায় ভেসে ওঠে বারবার, যার পিছনে হার্বার্ট ও তার ব্লাস্টথরোথরো সিলিন্ডার..... l


 

     নিজেকেই বারবার আঘাত করে বাজানো বাজনার বীজমন্ত্রগুলো কবি কেন আমাকে দিতে চাইলেন বুঝিনি। আমি স্থা-বিরোধী বলি কী করে।  বৃহত্তম অস্থিতির ভিতর থেকে উঠে আসা নিজস্ব ইতিবাদে তিনি নির্দেশ দিলেন, খুব ডেঙ্গু হচ্ছে। মশারি টাঙিয়ে নিস, স্বভাবসুলভ রসিকতায় বললেন জীবনানন্দ মশাদের অন্ধকার সংঘারামে জীবনের স্রোত ভালোবাসা শেখাবেন। নিজগৃহের পরবাসে আমার কোন মশারি  নেই। ছায়াপথে কোন ল্যাম্পপোস্ট দরকার হয়না। তিনি নির্দেশ দিলেন, ভোরে উঠে বারান্দায় অগ্নিহোত্র উচ্চারণ করিস, তোর স্থা আর আমার স্থা এক নয়। ভেঙে দিস না। ভেঙে দেওয়ার আগে বিকল্প তৈরি করে রাখা জরুরী। প্রতি ভোরে একটু একটু করে ক্ষমা শিখিস,প্রতি সন্ধ্যায় রতি আর আরতি। ভালো থাকবি। যে সকল শ্রুতি এবং প্রতিশ্রুতিগুলো রেখে গেছেন হায়রোগ্লিফিকে, পাঠোদ্ধার পারি নি এখনো শুধু চৈত্রপর্ণারা বন্ধনমোচনের আগে ডালে ডালে রেখে গেছে হাতিগুম্ফা।



     আমি নিজেই শুনিয়েছিলাম গার্হস্থ্য সাধ সাধ্য স্বাদ স্বাদহীন স্বাধীনতা  নিজস্ব টুটাফুটা, পায়া হাতল সানমাইকা গ্রীনরুমের আয়না ভাঙা কাঁচ ও কাঁচুলির কথকতা। এমনিই বলেছিলাম শুধু বলার জন্যই বলা, যেমন বুকশেলফ এ তুলে রাখা বায়োগ্রাফি। তাঁর কাছে ছিল ভৃগুশাস্ত্রীয় রেমিডি। ভীষণ অদ্ভুতভাবে তিনি আমাতে মাতৃত্ব দেখলেন কেন, ভার্চুয়ালি ছুঁয়ে থাকলেন প্রোল্যাক্টিন স্তন আমি তার ব্যাখ্যা খুঁজে পাইনি, অপব্যাখ্যায় ও যাই নি। "তুই আমার মায়ের মতো", প্যারডি গাইলেন পরজনমে ছেলে হওয়ার, এইসব ব্যাখ্যা হীন পরিবিষয়, কারণহীন কাজ, লালশাক বড়ি মোচা চিতলের মুইঠ্যার রেসিপি সমেত একট আস্ত রান্নাঘর...... এত মোহ এত ক্ষিদে বলেই কি ছিঁড়ে যাওয়ার যন্ত্রণাও এত তীব্র? জীবনিক মোহের নিহিতে বাদুড়ের ডানার গন্ধ পানাপুকুর পার করলেই এখন রাত্রির কাঁচ ভাঙে, ঝনঝন প্রেতশব্দে মাঝরাতে বাসনকোসন পড়ে, রান্নার ঘ্রাণ ওঠে, দেয়াল থেকে উঠে আসা সিম্ফনি আমাকে আক্রান্ত করে, আমি ঘেমে উঠে পেপারওয়েট দিয়ে মৃত্যু চাপা দিই। দেয়ালঘড়িটা তুলো পেঁজার মতো করে পিঁজে চলে তৃষ্ণার ক্যালরি বিতৃষ্ণার টক্সিনস।


 

তিনি বিবাহিত পুরুষ। যাচিত নারী আলনায় ডুরেশাড়ি আয়নায় টিপসহ সম্পূর্ণ গার্হস্থ্য রেখে অযাচ্ঞায় চলে যাওয়ার দু একটাই মাত্র আভাষ নেশাতুরে, এর বেশী জানতে চাই নি জীবনিক নগ্নসমূহ, লিকুয়িড প্রপার্টি অথবা ব্যাংক ব্যালেন্সের প্রকৃত দাবীদার কে বা কারা। তিনি স্বেচ্ছায় জানালেন যতটুকু ককিয়ে ওঠা ঘরকন্না বেঘর কান্নার গুহালীন সাজানো রান্নাঘর, খিদে আর রেসিপি, টানটান  বেডশিট, ভৃগু ভক্ত গণেশপূজক গোছালো যাপন।  কবিরা কখনো মিথ্যে বলেন না। তাঁর কবিতায় এত টেবিল ভাঙা, ল্যাম্পপোস্ট উপড়ানো,  পুরো সিস্টেম বিগড়ে দেওয়া। নিজের বুকে ঘা মেরে নেশাতুরীয় ননসেন্স হাহাকারে একদিন খুব চেঁচিয়ে বলতে চাইলেন "আমি কোন বীজ রেখে গেলে সে হবে হারামী কা অওলাত। আমি পিতা হতে চাইনা"  আমি তাঁর এই টক্সিক নেতির গর্ভের ননটক্সিক ইতি, তাঁর হারানো প্রাপ্তি নিরুদ্দেশ যাচনা বৈষম্য কিছুই তো মেলাতে পারলাম না!



   
       নাস্তিমান বাস্তব্য অথচ এখানে ওখানে এত  চুমু আর লালা গন্ধরস, ঝামরে এসে উপযাচিত স্নেহ, অস্থিতে এত অস্তি লেগে থাকলো যে ইরেজ করা গেলনা কোনদিন। এইযে মেঘডুবো দিন, 'চৈত্রপবনে' থরেবিথরে এত আষাঢ় সাজানো এখনই যেন বলবো এসব কথা, উষ্ণতা আপেক্ষিক আর্দ্রতা ডিগ্রী আর সেলসিয়াস ছাপিয়ে যাওয়া দূরমোচন মেসেজগুলো,আগ্রহী ছাড়া কাকেই বা জানানো  যায় ব্যক্তিগত যাপন!  তিনিও জানাবেন তাঁর  রুখাশুখা ভুখা রাজধানীর বারিহীন বাড়ি পুড়ছে.... পুড়ছে... এইতো রান্না হলেই মিছিমিছি আসন পেতে নিমবেগুন থেকে শুরু করব কথা। ইচ্ছে না হলেও বলবো।  সময় না থাকলেও বলবো,  কেননা কবি এর ভিতর খুঁজে নেবেন আপাত স্থা, কেননা কবি এই আলগা কাদাজল থেকে খুঁড়ে নেবেন ছিন্নশিকড়ের স্বাদ। এই তো ফোন নম্বর! এই তো ড্রাফটে সেভ করা মেসেজসমূহ। তিনি বলবেন মেলায় একটা তালপাতার পাখা কিনিস। আমি বলবো কুলো তো উনি বলবেন কুলটা, মজারু চাপানউতোরে স্যাটায়ার কাব্যভঙ্গ।

       ঘেয়োকুত্তার রাজনীতি আর গ্রামগ্রাম দলীয় তুলকালাম, বোধহীন বোধিহীন বাঙালির গায়ে থুতু ছিটিয়েও বারবার এই যে এখানেই আসতে চাওয়া, তেষ্টা পেলে জলের বদলে মদ খাওয়া এই সব বিতৃষ্ণার টক্সিনসের ভিতর কি তৃষ্ণার ক্যালরি  ছিল না?   বৈষ্ণব  আখড়ায় গহরগোঁসাই আর কমললতার গল্প, বাংলার   পালসরেট, পাখিডাকের অডিওক্লিপ, নদীসঙ্গম মাঝিমাল্লার ভিডিও ছবি কি ঘুমের আগে ঢকঢক পান করে নেওয়া বিশুদ্ধ জল নয়?

1 comment:

Facebook Comments