অহনা সরকার

 

অহনা সরকারের কবিতা

 ক্যানেস্তারা



অর্থনীতির স্কেলিটনটা অনেক দিন ধরেই খেয়ে যাচ্ছে আশেপাশের বেঁধে রাখা। এই যে দোকান সাজানো সব ব্যয়, কাঁচের ওপারে হাত ঘষে মিনমিনে মুখে দাঁড়ানো মধ্যবিত্ত বা তথাকথিত আমিও, কানের পাশে একটা বুলেট রেখেছি শুধু শব্দ হলেই পাল্টে নেই টিভি চ্যানেল।

আমি বলছি না শুনছি এটা না জেনেই বাকিটা চেঁচিয়ে নিল ডায়াসের ওপাড়ের লোকজন। মৃত আলো বা হরিবোলের গলি, তাদের নতুন করে সর্বনামের দরকার পড়ে না, সবাই জানে।
ঠান্ডা বরফটা, নিঃশ্বাস বন্ধ ঘরের তাপমাত্রা কমিয়ে, বাড়িয়ে কখনও বা থামিয়েও জানান দেওয়ায়!

-"ওই ওই শালা! ভালই তো মাল ফুঁকছ! বলি আজ কটা জমা পড়ল?
না রে জগাই! শালা পার্টিগুলো একদম লোচ্চা। মরা নিয়ে যাবে, তারও কত ধানাইপানাই!
-কালকে'র ছেলেটার পার্টি দিল কত?
কই আর দিল! সেই একই মরাকান্না! শালা মালেরা নাকি বিখ্যাত ছিল! কাগজে, কেবলে ছবি দেখাবে! আর আমরা চুষব!"

বাইরের এই যে ঘামে ভেজা পিচ, রোদতালিতে খড়খড়ি নামানো দরজা। বারান্দা থেকে হাঁক পাঠিয়ে গিন্নীরা ফেরত পাঠান ফেরিওয়ালাদের। খুচরোর দাম কত ইঞ্চি বাড়লে, প্রতিদিন কটা মানুষ না খেতে পেয়ে মারা যায়! ঠান্ডা ঘরের কোন মানুষ, কোন মগজ আদৌ কখনও, কোনদিন! ভেবেছে সে কথা!? ভাবতেও চায় কি!
হলুদ ব্যারিকেট, লাঠি আর টিয়ার গ্যাস! বাড়াবাড়ি বেশি হলেই, সশস্ত্র গুন্ডাবাহিনী চালিত হত্যা!
মৃত্যু! একলাইনের সরলরেখায় তারপর বাকি সমস্ত সকাল। পরিচয়বিহীন এই যে আমি! মৃতঘরের একপাশে গত ১৫ দিন ধরে। কাঁপা কাঁপা কিছু হাত, বিষাক্ত চোখ, ঘৃণ্য দেখায় নেড়ে চেড়ে জানিয়ে যাচ্ছে তাদের পরিচিত কেউ নই! অথচ!
এদের সবার ঘরে, থরো থরো আলমারি, উইয়ের দাঁত, গুমোট দরজা, তুঁতে নেলপলিশি আঙুলে, রোজ প্রতিনিয়ত আমিই নাকি লক্ষ্য! সময়!

"কে হয় আপনার?
-ছেলে
৫০০০ লাগবে
-সে কি! মর্গে থেকে নিয়ে যেতে ......
তো! এতদিনের দেখাশোনা! বরফের খরচা! এসব কি ওই বিল্পব দেবে নাকি! যান যান, মাল নিয়ে আসুন তবে বডি রিলিজ করব
-কিন্তু!
যাবেন কি না!?"

কেউ নাকি কখনও বলেছিলেন! বাস্তিলের পতন, একমুঠো রুটির সামনে ঘাড় নুইয়ে দাঁড়ানো যত শীত, আজ তাদের মুক্তি ঘটল! মুক্তি! গলে যাওয়া হিমবাহর চরায়, দাত্য হতে হতে লাশঘরে ঘুমিয়ে আমিও! অচেনা, আনওয়ান্টেট, পরিচয়বিহীন একটা শবমাত্র! বিল্পব



সাঁকোর ওপারে



মানুষ হারিয়ে যায়।
শেষ পৃষ্ঠায় লেখা এই ছড়াটার মতোন, কেন কে জানে! এখন ডালপালায় ভরে উঠছে ছায়ার আলপথ। ছাতার নিচে ঘুমিয়ে থাকা কোন
অচেনা দ্বীপ। দূর থেকে সরে আসলেই বাঁধার ঘাটে, ওই যে সূর্যডোবা পানকৌড়ি!
অ্যাক্রোলিকের নতুন শিশিতে আকাশ বাজি রেখেছে মন

পাইন গাছে ওপর ডানাভাঙ্গা একটা মথ বসেছিল, জিপটা স্লিপ করে শূন্য যখন
ধীরে ধীরে আলাদা করছে মাটি! জিভের নিচে ভুট্টার হলুদ ঘ্রাণ, খোলা চুলে গৃহস্থের খামারে সেই মাত্র
শিয়ালের চিৎকার ডেকে ওঠে।

আনমনা তিস্তায় পা ডুবিয়ে ওই যে নদী, খেয়ার জলে কোন উপসাগর
এখন আর মা হতে চায় না। ঘাসের কণাটা নখের পাশে রেখে, চোখ আনমনে চিবিয়ে চলেছে আঙুলের রস!
বেশ অনেকক্ষণ পরে, পাশ ফিরে জানতে চাইলে,
"কিছু বলছ"?
বরফগলা নদী ততক্ষণে আলাদা করেছে আঁশটে দুপুর

"Between shadow, dark of moon-night
Alove
On empty couch, wise sitting beside of arms".

স্বরবিতানের ঘর খুলে ছুরি কাঁচিগুলো মুছে নিয়েছে হাত।
তোয়ালের কান্না ভেসে আসে কোন নির্জন
দূরাত্বে



কাঁচপোকা



অনেক দিন হল দরজা খুলিনি। আলোর মুগ্ধতায় হাত রেখে
শাল জড়িয়েছে তন্দ্রাজ্বর।
আমাদের দেশে ঘাসগুলো বেশ বড়, অনেকটা দূর্গের মত
তার আঁচড়ে ঢেউতোলা চুল নেমে আসে নিঝুম পায়ে
"কখন এলে"?
সোফার মাথায় পর্দাদের পরিকল্পিত ভিড়।
স্কুল শেষে যখন আমরা ফিরতাম, যার যার মা তখন দিনগুলোকে সাজিয়ে নিয়েছে।
বাতাসের বালিয়াড়ি নিঁখুত চোখে আলাদা করছে অবসাদ।

সমস্ত লং ড্রাইভের পাশে একটা করে এটিএম বুথ থাকে।
নেমে যাও তুমি ধীর পায়ে।
নাম না জানা গাছের গায়ে হেলানো ঠোঁট এরপরেই মুছে নেয় বারুদ। ধোঁয়াগর্ভে ততক্ষণে শহীদ
ভলকানো।

1 comment:

  1. শেষের দুটোর সাথে প্রথমটার ফারাক এতটাই অবিশ্বাস্য ঠেকে যে অনেকক্ষন বিশ্বাস করতে মন চায় না, শেষের দুটো যার লেখা, প্রথমটিও একই কবির। নিশ্চয় অন্য কারোর লেখা ঢুকে গেছে। জানিনা লেখাটা কেমনভাবে ঘটেছে, কবিকে চিনি বলেই জানি যে নিশ্চিত লেখাটি ঘটে উঠতে দেখেছেন, অসৎ এর কলম ওনার তল্লাটে থাকে না।
    তবে প্রথম কবিতায় শেষ শব্দটির "বিল্পব" ই যদি হয় তাহলে বলবো বড্ড অকাজের গিমিক, আর যদি ওটা "বিপ্লব" এর বানান ভুল তাহলে এর মতো এত অশ্রাব্য হয়ে ওঠা শব্দ বহুদিন পড়িনি।

    আমি আপনার বহু পুরোনো পাঠক, তাই শূন্যকাল প্রকাশিত হয়েছে শুনেই প্রথম আপনার পেজটি খুললাম। অনেকটা বহুদিন বাদে হাতে একটা ইন্দ্রজাল কমিক্স বা আমর চিত্র কথা পেলে যেমন উজ্জ্বল উদগ্রীব ভেঙে পড়ে শিশুটির চোখে।
    কিন্তু প্রথম লেখাটার আপারকাট কোনমতে সামলে দ্বিতীয়তে এসে একটু মলমের নিঃশ্বাস পেলাম। মলম কিন্তু মোলায়েম শব্দ থেকে জাত, জানেন তো? ঘাসের কণাটা নখের পাশে রেখে চোখ চিবিয়ে চলেছে আনমনে আঙুলের রস, খানিক ওই যাকে বলে "ভ্রুকুঞ্চনে স্মিতধ্বনি কুঞ্চতোয়া নদীর", ওই স্মিত শব্দ করলো চোখ অল্প...... তারপর পড়া হয়েই গেল দুটো।

    নাহ অহনা, আমার দেখা চতুর্দিকে চিরকালই ত্রুটিনিপুণ সসন্ধানী। তাই হয়তো এখানেও। তবে বড্ড কষ্টে আছে শব্দগুলো। কে যেন জোর করে ঠেলে এনেছে ওদের, বদলাতে হবে ভঙ্গিম, বদলাতে হবে রূপরুঙ্গম, সরে গেছে মোমালোপ্রবণতা, অন্ধকার সবসময়েই গহনার মতো ঘটতে দেখেছি লেখায় আপনার। আলোআঁধারির দুধ খাওয়া চিল উড়তো ঝনাৎকারে। এগুলো গহনা নয়, জোব্বার মতো, আলখাল্লার মতো, বোরখার মতো নেমেছে অন্ধকার। ফলে দেখারও বড় দমবন্ধ লাগে। আর সেই অন্ধকারের যেন কি নিদারুণ অধিকারবোধ শব্দদের ওপর, তাই অনেক শব্দের তীব্র ছটফট দেখা যায়। সোফার মাথায় পর্দাদের পরিকল্পিত ভিড় হোক, পরিকল্পিত ভিড় হবে না অপরিকল্পিত ভিড় হবে এই নিদ্বিধাটির ছাপ যতো দেখা যাক, বাতাসের বালিয়াড়ি যখন নিখুঁত (না নিপুণ না নিখুঁত না নিপুণ না নিখুঁত) চোখে আলাদা করে ফেলছে অবসাদ। তখন অবসাদ বীভৎস যন্ত্রণায় কাতর।

    অনেকদিন বাদে পড়লাম আপনার লেখা, তাই অনেক কথা। আবার বলছি, আগেও বলেছি, লেখা নিয়ে শেষ কথা আপনার, শুধুমাত্র আপনার, সেখানে আর কেউউউ নেই। নোবডি। তাই আমার এই কথাগুলোও সেখানে থাকবে না, মানে শেষ কথা বলার সময়, তাই ধরে নিয়েই লিখলাম। আমি তো আমার কবিতা পড়েছি আর আপনি আপনার কবিতা লিখেছেন, তাই আমার দেখাটি নিখাদ ত্রুটিও হতে পারে।

    ভালো থাকবেন, লিখবেন প্রচুর। অনেক অনেক। বহুকাল আপনার লেখা পড়িনা। অনান্য ওয়েবম্যাগগুলোতে পাঠান না কেন?

    অমিতাভ লেখা একটি প্রহরাজ

    ReplyDelete

Facebook Comments