মু্ক্তি মণ্ডল


মু্ক্তি মণ্ডলের কবিতা

শ্যামা


বজ্র মেঘের বিজলিতে ঘরের দোর খুলে
প্রণয়ীর কাছে এসে সর্বস্ব সঁপে
উৎফুল্ল ভোরের হাওয়া,
শরীর ভর্তি বিদ্যুৎ লতা বেয়ে জ্বলে উঠছে
সবুজ কাকরোল
আর শত হরিণীর মাথা,
বির্স্তীণ ফসলের মাঠ ড্রয়িং রুমের
দেয়াল জুড়ে ছড়িয়ে আছে,
এককোণে ফুঁসে উঠছে মহিষের শিং
বিপরীত দিকে নদীপাড়ে শুয়ে আছে
মৌন রোদকুমিরের পিঠ,
দূরে ছুটছে মেঘের হল্লা।

ছায়াময় গোপন সুড়ঙ্গ থেকে
আমরা এইসব দেখতে থাকি,
অশ্রুমালা মুছে
কাছে আসে পুঁজিপতির লুণ্ঠনকৃত চোখাচোখি,
বস্তাবন্দি চোখগুলি দেখে
আমাদের বেডরুমের মৃদু আলোয়
ভাসতেছে বিলুপ্ত বাহার,
সামন্তমানস চেটে খাচ্ছে তার দেহ।

হুরভাবনায় শিহরণে ছুটছে পিছনে পা,
কাঁপছে শবাগার
যেন ফিরে আসছে দ্বিধার মুখনিচু
ব্লেডের অবাধ্য হিংস্রতা।

এই রক্তাক্ত ডিলেমা থেকে ফিরে এসে
বারবার মুখঘষাঘষি
শেষে চলে যাবে মন জ্যোতিষীর কাছে,
বন্ধনছিন্ন বুনো আঁধারে
জুতার তলা ক্ষয়ে যাওয়া বুকে
মাথা রেখে ঘুমিয়ে যাওয়া তুমি
সমাজেরই নীতি-বিশ্বাসের ভড়ঙ,
আমাদের মুখ ফর্সাক্রিম।
আজ একটু কাছে এসে দাঁড়াও তুমি,
আজ মৌষ ঠেলবে তোমাকে।
রীতিনীতির বিজ্ঞাপনে তুমি খুলবে
শ্রেণি-বিদ্বেষ অশান্তনাভি,
তোমার ননী এবং নানরুটির ভাঁপে
ডুবে থাকা ধূর্ত বুদ্ধিজীবী
আজকে প্রদর্শন করবে কোমলতা,
শত শত বিষ্ঠার প্যাকেট।

অনেক বাঘ জেগে উঠবে
ভেঙে পড়বে ম্যাচবাক্সের বিজ্ঞাপন
দেখব চোখের কোণ থেকে সরে যাচ্ছে
ভাজ করা টাইয়ের স্তুপ
দেখব মাঠ-দগ্ধতা শূন্যে তুলে নিয়ে
গা ধুয়ে বাড়ি ফিরছে পরি।

উদ্ভট—প্রণম্য ছহি পাল্লা খুলে দেখি
হর্ষ মেশিনের ফুটো দিয়ে
ক্রমাগত বের হচ্ছে প্রলাপের ধারা
ইস্পাতের টোলপড়া গালে
ডুবছে হরপ্পা, সমস্ত নদীর বাঁক।
সবুজ আভা ছড়ানো পাখিদের ঝাঁক
থেকে সরে আসে পরকীয়া
ঘুমঘোরে ডুবে আছে উঁচুনিচু গ্রাম
ভাণহীন বায়ু তার পাখা
দেখি সূর্যের ঘুমভাঙা চোখের সীমা।
তার গুপ্ত ব্যঞ্জনার খাদে নাগরিক—
সঙ পুতুলরে পা জড়িয়ে
ঘুমের ভিতর আকড়ে ধরে খড়ম
কেঁপে ওঠে সামন্ত নবাব
মুদ্রণের ঘর্ষণে ফোটে শ্রেণিবিষাদ
সুর ভাসে মহুয়া বাতাসে।

কৌশলী জ্ঞানের ওপোর ছড়ানো ধুলো
ঘাপটি মেরে বসে থাকার প্রজ্ঞাপন
ছায়ার সাথে মিশে থাকা প্রজ্ঞার দিশা
তুমি ফিরিয়ে দাও করুণার অঞ্জলি
হেসে উঠুক সোফিয়ার ছড়ির কোণ।
তোমার ছাঁচ থেকে দ্রুত সরিয়ে নাও
বিদেশী সব নকল বেড়ালের ছায়া।

যান্ত্রিক জীবনে ভেসে রোয়া উঠা ছাঁচ
আঁকড়ে ধরা প্রণয়ীর স্বভাব
শ্যামের পোষাকে অলক্ষ্যেই হাত রাখে
কুচকানো মুখে রোদ পড়া
ভাঁজে যদি ফের ফিরে আসতে চাওয়া
মনোটোনাস মধ্যবিত্তের ঢল
আয়নার ভেতর লুকিয়ে ফেলে থাবা!
তখন নদীপারে যদি ফুলের দেহ
কাঁপে জ্বরে, ঘুমের ভিতর যদি তুমি
পুরনো দেহের ঘ্রাণ ফিরে পেতে চাও
তবে আমি কি বুনোপুষ্পেই ফিরে যাব?
প্রহর খুলে কি দেখতে পাব তোমাকে?

এইসব ভাবি আর
আরো নির্বিকার
পুরনো মৌন পাথরে যদি দাগ ভাসে
কাছাকাছি এসে যদি কেউ হাত ধরে
দেখে নিতে পার তুমি প্রাণের গভীরে
তার মূর্ত অহঙ্কার
রাতের ঝলক।
অর্ন্তলোক খুলে ভেঙে যেতে দিও তারে।
চুম্বনকৃত মোহ
সরিয়ে রোদ নীলে,
সহস্র তারায় উড়ে যেতে পারো, শ্যামা।

No comments:

Post a Comment

Facebook Comments