অনিন্দিতা গুপ্ত রায়



অনিন্দিতা গুপ্ত রায়ের কবিতা 


এই তো তোমার প্রেম



ব্যলকনি থেকে ঘরের যেটুকু দূরত্ব
তাকে পার হয়েই আসছি প্রতিটি দিন, প্রতিটি স্পর্শ
ঘাড়ের নিচে নৌকোচিহ্ন এঁকে দিতেই
সম্পূর্ণ একটা সমুদ্র খোলামেলা
ঢেউ আর জোয়ারের গল্পে
অজস্র আলো জ্বলে উঠছিলো কাচের অন্যদিকে
অনেকটা বিদায় টপকে এসে তোমার ভারি ডানা
লবণ খুলে রেখেছিল উপত্যকায়, বিশ্রাম খুঁজে 
ডুবে থাকা চোখ ভিজে উঠছে টের পাই,
মাঝখানে যে জলপ্রপাতের শব্দ
বৃন্ত ঘিরে ঘিরে ফুল্লকুসুমিত
তার পাতায় সংশ্লেষে, আলো--গড়িয়ে গেল শিকড় অবধি
আর আমরাও বোবার ভূমিকায় জিভ বন্ধক রেখে
হাতের পাতায় চোখ এঁকে রেখেছিলাম শুধু 



এসো ---বলতেই যেন শতাব্দী পেরিয়ে এলো মুহূর্তে
পদাবলির পাতার ভেতর খুলে রাখা হলো নূপুর
জল ক্রমশই গলা অবধি উঠে আসে নাকি চোখ থেকে নেমে যায়
বিশ্বাস অবিশ্বাসের মাঝখান দিয়ে অবিকল নদী হয়ে যায় 
তার ভেতরে ধুয়ে নিতে পারি জ্বলন্ত রুমাল, যমুনা রঙের 
মুখোমুখি স্পর্শের ভেতর ঝলসে যাওয়া মাংস সরিয়ে
দপদপ করে উঠছিল যে জোনাকি
মুঠোর ভেতর—তার গায়ে আতর লেগেছে
নিজের সমস্ত টুকরো কুড়িয়ে তুলে অন্ধতা মুছিয়ে দিয়েছ ঠোঁটে
সেই থেকে দুই চোখ দৃশ্যে লিখে রাখে, মাথুরকাহিনি 
 



অনুপস্থিতির মধ্যে ডুবে আরো গাঢ় হয়ে যাচ্ছ
তুমি বুঝতেও পারছ না
সেই নাটমন্দিরের সন্ধ্যারতির শব্দে
চাপা পড়ে যাচ্ছে ফুঁপিয়ে ওঠা গুলো
অন্ধকারের দিকে হেঁটে হেঁটে খুঁজছি
দীর্ঘ একটা ছায়া যার আড়ালে
সময় নিয়ে আঁকছি সংকেত, লিখছি চিহ্ন 
তাদের ভাষা হয়ে ওঠা অব্ধি অপেক্ষা করবে তো, বল?  



রাত্রি গভীর হলে স্বপ্ন আমাকে লেখে
ঘুম অগভীর হলে আমি স্বপ্নকে
আর অলিখিত থেকে যায় যে সহস্র এক রজনীর গল্প
তার গা থেকে ক্রমাগত রেলস্টেশনের ঝমঝম শোনা যায়
একা স্টেশনে বসে চলে যাওয়া দেখার মধ্যে যে ভার থাকে
তার তোয়াক্কা না করে যথাক্রমে চলৎশক্তিহীন দু’জন প্রনয়ী
হাতে হাত রেখে থামিয়ে দিয়েছিল সব যাতায়াত
সমস্ত ট্রেনই গন্তব্যে পৌঁছবেনা, ঠিক সময়ে---জেনেই 


4 comments:

  1. Pure bangalinir anshte gandha Vora.....

    ReplyDelete
  2. কয়েকবার পড়লাম। যতবার পড়ছি, গভীরতা বেড়ে যাচ্ছে। অনেক অনেক ভাল লাগা। সমস্ত ট্রেনই গন্তব্যে পৌঁছবে, ঠিক সময়ে...

    ReplyDelete
  3. মুগ্ধতা...একটা আবেশ জড়িয়ে থাকে...প্রতিটি শব্দ এত গভীর, এত মর্মস্পর্শী...নাটমন্দিরের সন্ধ্যারতির শব্দে
    চাপা পড়ে যাচ্ছে ফুঁপমস্পরশী......উফফ, সারাজীবনে যদি একটা লাইন লিখতে পারতাম এমন! কুর্নিশ...

    ReplyDelete

Facebook Comments